রাষ্ট্র বিনির্মাণে আইসিটি খাত বিষয়ে প্রস্তাবনা

মামুন অর রশীদ ।
লেখক ও গবেষক । ৯ই আগস্ট ২০২৪।
যোগাযোগ ইমেইলঃ mamunbd@juniv.edu,
নিবন্ধটি ১৪ই আগস্ট ২০২৪ তারিখে কালবেলা পত্রিকায় প্রয়াশিত হয়
অতিরিক্ত কিছু পরামর্শ হাসনাত আবদুল্লাহ (সফটঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রাক্তন গবেষণা সহযোগী, ইআরজি) যোগ করেছেন।

[রাষ্ট্র বিনির্মানে সহায়তার লক্ষ্যে ইকনোমিক রিসার্চ গ্রুপ-এর উদ্যোগে কয়েকটি খাত-ভিত্তিক পত্রপাঠ প্রস্তুতের উদ্যোগ নেয়া হয়। নির্দিষ্ট রচনায় বিভিন্ন ব্যক্তি বিনে-পারিশ্রমিকে নিজ অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও মত বিনিময় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এগুলো প্রস্তুত করেছেন। ]

সংক্ষেপে বিদ্যমান ব্যবস্থা

এই খাতটি বিশাল, যা অন্যান্য অর্থনীতিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা খাতের সাথে সংযুক্ত। তাই রাষ্ট্র ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে চাইলে আইসিটি খাতের উপর নিয়ন্ত্রণ এনে তাঁর বিবিধ উপখাতগুলোকে কার্যকর করা জরুরি। বিশদ বর্ণনায় না যেয়ে সংক্ষেপে বিদ্যমান নিকট অতীতের চলমান ব্যবস্থার কিছু সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা যেতে পারে, যেগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে।

এখানে ততোধিক সরকারি কোম্পানি তৈরির প্রবণতা অস্বচ্ছতার ঝুঁকি তৈরি করেছে। কোম্পানিগুলো লাভ দেখেনি, এবং দেখার সুযোগও নেই। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের নামে সরকারকে, মূলত জনগণকে ঠকানো হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারের লাভ খুব নগণ্য। এক্ষেত্রে ‘পরিচয়’ পোর্টালের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এতদিনকার চালুকৃত ব্যবস্থায় সংযুক্তি (কানেকটিভিটি) তৈরির নামে দায়বদ্ধতার বিধান না রেখে, দু-একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে।

দেশের তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় হলেও টিয়ার ফোর ডেটা সেন্টার একটি অপচয়মূলক উদ্যোগ হিসেবে অনেকের কাছে বিবেচিত হয়েছে, যেখানে ভেন্ডরগুলোর সাথে অসম চুক্তি করা হয়েছে। ওপেনসোর্স প্রযুক্তিকে না রেখে প্রোপাইটরি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান যেমন, ওরাকলের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এ-বিষয়গুলোর যথার্থ্য পর্যালোচনাযোগ্য। উপরন্তু, এই প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করার জন্য সরকারি ডেটাসেন্টারে উচ্চমূল্যে হোস্টিং সার্ভিস বাধ্যতামূলক করবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখানে ডেটা সিকিউরিটি ও জবাবদিহিতারও ঘাটতির কথাও গণমাধ্যমে এসেছে। যেমন রাজউকের অত্যন্ত স্পর্শকাতর তথ্য নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছিল যা সংবাদে প্রকাশ পেয়েছে। তবে এই ধরনের অবকাঠামো (ইনফ্রাস্ট্রাকচার) এর প্রয়োজন রয়েছে বিধায় পর্যাপ্ত অনুসন্ধান সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

এছাড়াও হাইটেক পার্ক উচ্চ প্রযুক্তি বা ভবিষ্যত প্রযুক্তির কর্তৃপক্ষ হিসেবে পরিচিতি পায়নি, পেয়েছে দালান তৈরির সংস্থা হিসেবে। এই প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ ও দালান ও অপ্রয়োজনীয় ভৌতকাঠামো  তৈরি করা হয়েছে যার ব্যবহার নেই বললেই চলে। হাইটেক পার্কগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার চুক্তি নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে প্রচুর লেখালিখি রয়েছে গণমাধ্যমে।

স্টার্টআপ কোম্পানি ও এই জাতীয় নানাবিধ কোম্পানিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, যার প্রকৃত ফলাফল মূল্যায়ন করা জরুরি। একইসাথে, তথাকথিত ‘দ্বৈত-নাগরিক’দের দিয়ে ফ্রিল্যান্সার তৈরি ও প্রশিক্ষণ এর নামে অর্থ অপচয় করা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে এসেছে।

স্মার্ট দেশ গড়ে তোলার সকল প্রচারণার কেন্দ্রে থেকেছে এটুআই (a2i) প্রকল্প, যার মাধ্যমে আইসিটি খাতের দেশি-বিদেশি বরাদ্দ ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল। অথচ, এটুআই বহিরাগত পরামর্শকদের সহায়তায় (ন্যাশনাল পোর্টাল ও ই-নথি ছাড়া) উল্লেখজনক কোনো কাজ করেনি। এমনকি নিজেদের মাঝে কারিগরি সক্ষমতা গড়ে না তুলে প্রতিষ্ঠানটি বিজনেস স্কুল (ব্যবসা-শিক্ষা) বা সমধর্মী স্নাতকোত্তরদের নেতৃত্বে একটি বিজ্ঞাপনী এজেন্সি হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। এটুআই এজেন্সি হয়ে নিজে টেক কোম্পানি হিসেবে কাজ করার পরিকল্পনা করেছে যা দেশীয় বেসরকারি টেক প্রতিষ্ঠানের জন্য হুমকি বলে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া, সংশ্লিষ্টজনরা মনে করেন, অগভীর, জনপ্রিয়, সস্তাধারণামূলক প্রযুক্তিগত প্রকল্প প্রণয়ন করে সেসব থেকে প্রাপ্ত অর্থ খরচে উত্সাহ দেখা গিয়েছে।

রাজনৈতিক বিবেচনায় জনতুষ্টিবাদের উদ্দেশ্য এবং অস্বচ্ছ উপায়ে অর্থ অপচয়ের উদ্দেশ্য ছাড়া প্রশাসনিক বিভাগ হিসেবে আইসিটির অনেক কিছুই করার আছে। যেগুলো নাগরিক অধিকার, সুশাসন ও ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করবে।

পুর্নবিবেচনার জন্য আইসিটি খাতের নির্দিষ্ট কিছু বিষয়

নিম্নে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো যেখানে বাংলাদেশের নবগঠিত সরকার উদ্যোগ নিতে পারে:

১. ইন্টারঅপারেবল পাবলিক সার্ভিস প্রতিষ্ঠা: সরকারের সিদ্ধান্তগ্রহণে স্বচ্ছতা (ট্রান্সপারেন্সি) প্রতিষ্ঠায় ও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সতত-পরিবর্তনযোগ্য নাগরিক তথ্যভাণ্ডার (ডায়নামিক সিটিজেন ডেটাবেজ)-এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। দেশে সার্বজনীন ও সরকারি (পাবলিক) সেবা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন গতিশীল ব্যবস্থা (ইন্টিলিজেন্ট ডায়নামিক সিস্টেম)-এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়। এই সেবাগুলো বর্তমানে আন্তঃসংযোগীয় কার্যক্ষম (ইন্টার-অপারেবল) কোনো প্লাটফর্ম থেকে দেয়া হয় না। নাগরিক পরিচয় (সিটিজেন আইডেনটিটি)-এর তথ্যভাণ্ডার (ডেটাবেস), যেমন,  পাসপোর্ট, এনআইডি ও শিক্ষা সনদ-এর সঙ্গে, আর্থিক ও কর-সংক্রান্ত তথ্য (ফিন্যান্সিয়াল/ট্যাক্স ডেটা), সরকারি সেবাদান তথ্য (পাবলিক সার্ভিস ডেটা), ও পারিবারিক তথ্যভাণ্ডারের  সংযুক্তিকরণ প্রয়োজন।

২. রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী আইটি স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ: সরকারের সকল সংস্থা বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে সফটওয়্যার ও সেবা-সরবরাহের নকশা (ডিজাইন) প্রণয়ন করে। শুধু ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর গণ্য করলে দেখা যায় যে, এনবিআর, অর্থ মন্ত্রনালয়ের আইবাস, সিপিটিইউ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সবারই পৃথক পৃথক সফটওয়্যার আছে। সফটওয়্যারগুলো নির্মাণ করা হয়েছে পৃথক টেকনোলজি স্ট্যাক ব্যবহার করে। কার্য-শর্তাবলিতে (টিওআর) ব্যবহারকারীদের জন্য নির্দেশ-পুস্তিকা (স্পেক) তৈরিতে কখনো আইসিটি, বিসিসি, বা কখনো অ্যাকাডেমিয়ার সহযোগিতা নেয়া হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সকল সার্ভিস ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য একই মান অনুসরণ করে ইউজার প্রোফাইল, সিকিউরিটি, টেস্টিং, এক্সেসিবিলিটি, ইউএক্স, লাইফসাইকেল, ওনারশিপ ও লাইসেন্সিং নিয়ে স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করতে হবে।

৩. উপাত্ত (ডেটা) ও তথ্য (ইনফরমেশন) নিরাপত্তা: দেশের প্রায় সকল ধরনের স্পর্শকাতর তথ্যাদি নিরাপদ বলয়ে নেই। বিশেষত, পাসপোর্টের আইরিশ ডেটা, সরকারি নথি ডেটার মতো বেশ কিছু উপাত্ত (ডেটা) ও তথ্যব্যবস্থা (সিস্টেম) বাইরের দেশে (যেমন, সিঙ্গাপুরে) মোতায়েন (ডেপ্লোয়) রয়েছে। এ-জাতীয় পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে ব্যাংকিং ও নাগরিক (সিটিজেন) ডেটার নিরাপত্তা সুরক্ষার জন্য দেশীয় পরামর্শক (কনসালটেন্ট)দের উপর নির্ভর করতে হবে। বর্তমান ব্যবস্থাটি খুবই অনিশ্চিত ও ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। ডেটা সেন্টারের সিকিউরিটি সফটওয়্যারগুলো চীনের তৈরি, আবার কখনো বিক্রেতা (ভেন্ডর) বা খদ্দের (ক্লায়েন্ট) পরামর্শকরা ভারতীয়। এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করে দেশীয় দক্ষ নির্ভরযোগ্য মানবসম্পদ তৈরির জন্য একাডেমিয়ার সাথে মিলে মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৪. নীতিমালা সংস্কার:

– ক. ডেটা প্রাইভেসি নীতিমালা: আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় চূড়ান্ত ব্যবহারকারী (এন্ড ইউজার)-দের উপাত্ত গ্রহণ, সংরক্ষণ, বিনিময় (এক্সচেঞ্জ)-এর বিষয়ে কোনো জনবান্ধব নীতিমালা নেই। সফটওয়্যার ও পুরো ইকো সিস্টেমে তথ্য-উপাত্ত গোপনীয়তা (ডেটা প্রাইভেসি) নিয়ে নীতিমালা ও কারিগরি নির্দেশিকা (টেকনিক্যাল গাইডলাইন) প্রণয়ন করতে হবে।

– খ. নিরাপত্তা আইন (সিকিউরিটি অ্যাক্ট): সমালোচিত সিকিউরিটি অ্যাক্টের পরিবর্তন করতে হবে। মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশ উপযোগী ইন্টারনেট ব্যবহারের নীতিমালা করতে হবে।

– গ. অনলাইন মিডিয়ায় মতপ্রকাশ ও তথ্য-বিকৃতি (অপিনিয়ন ও মিসইনফরমেশন): আজকের যুগে, ব্যক্তি-স্বাধীনতার একটা বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে ইন্টারনেটে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। তবে অনলাইনে মিসইনফরমেশন দিয়ে ভাইরাল হওয়ার পেইজ, রিল, ওয়েবসাইটগুলো নজরদারীতে এনে কিছু সুরক্ষামূলক শিথিলভাবে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৫. বিদেশি সেবা স্থাপন (সার্ভিস ইনস্টল) ও বৈদেশিক মুদ্রা আনয়ন: নানা কারণে এদেশে আমাজন, পেপাল, স্টারলিংক, গুগল পে, আইক্লাউড/অ্যাপল পে প্রভৃতি সার্ভিসগুলো নেই। এগুলো এদেশে চালুর ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে ওসিআর, টিটিএস, এসটিটি সার্ভিসগুলোতে বিদেশি নির্ভরতা কমাতে হবে। ডেটা সেন্টারের মাধ্যমে ডেটা লোকালাইজেশন (স্থানীয়করণ) বাড়াতে পারলে, বাইরের দেশে ক্লাউড, জিপিইউ ভাড়া-বাবদ যে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়, তার সাশ্রয় ঘটবে।

৬. আইটি ফ্রেন্ডলি রিয়েল লাইফ ডিজাইন: ই-বাণিজ্যের সুবিধার্থে ডাক-যোগাযোগের ঠিকানা প্রমিতকরণ, প্রযুক্তির মাধ্যমে গাড়ির নম্বরকে চিনবার (রিকগনিশন) উপযোগী, রাস্তার সাইন আইওটি কার (গাড়ি) ও স্ক্রিন রিডার উপযোগী করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে ওপেনস্ট্রিট জাতীয় ওপেনসোর্স ম্যাপ ব্যবস্থা ব্যবহার করলে সাশ্রয় হবে।

৭. আইসিটি অবকাঠামো (ইনফ্রাস্ট্রাকচার): আইসিটির মূলকাজ শুধুমাত্র নীতি প্রণয়ন (পলিসি) ও প্রমিতকরণ (স্ট্যান্ডার্ড তৈরি) নয়। এছাড়াও সংবেদনশীল তথ্য-উপাত্ত (সেনসেটিভ ডেটা) নিরাপদে সংরক্ষণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বিদেশী ব্যক্তি-খাতের মাধ্যমে তা পরিচালনা করলে নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে যায়। সেই ঝুঁকি হ্রাসের উদ্দেশ্যে নিজস্ব অবকাঠামো (ইনফ্রা) তৈরি করা জরুরি। এই জন্য মিররিং ক্যাপাবিলিটি সহ ক্লাউড ডেটা সেন্টার বাড়াতে হবে যেখানে যথেষ্ট জিপিইউর ব্যবস্থা থাকবে।

৮. প্রকল্প প্রণয়ন: এআই ও সিকিউরিটি নিয়ে বিভিন্ন অর্থকরী (রেভেনিউ আর্নিং) কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। সেমিকন্ডাক্টর শিল্প প্রসারে প্রকল্প হাতে নেয়া সম্ভব।

৯. আইসিটি ও ভাষা: ভাষার সঙ্গে আইসিটির সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিকও। যেমন, গুগল ও চ্যাটজিপিটি উভয়ই ভাষার সফটওয়্যার যা তাদের বিশ্বের প্রধান টেক ইন্ডাষ্ট্রিতে পরিণত করেছে। বাংলা ভাষা নিয়ে ভারতের সঙ্গে একটি দ্বৈরথ ও টেকনিক্যাল কূটনীতির টানাপোড়েন চলছে ইউনিকোড ও ডোমেইন নিয়ে। ভারত প্রযুক্তি বিশ্বে বাংলাভাষার প্রতিনিধিত্ব চাইছে অনেকদিন ধরে। এছাড়াও ওসিআর, ম্যাশিন ট্রান্সলেটর, ভয়েস টাইপিং নিয়ে ভারতের সরকারের এদেশে দৃষ্টি রয়েছে যা ডেটা সিকিউরিটির সহায়ক না।

১০. সামরিক স্বনির্ভরতার জন্য প্রযুক্তি: দেশের সামরিক বাহিনীকে দেশীয় জনবল পরিচালিত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার জন্য আইসিটি সমন্বয়ক হতে পারে। বর্তমানে স্থল আকাশ সমুদ্র নিরাপত্তার মতো ইন্টারনেট ও ইনফরমেশন নিরাপত্তাও গুরুত্বপূর্ণ। যা দেশীয় উদ্ভাবনে উন্নত করার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।  নতুন সরকারের জন্য এসব বিষয়গুলো দ্রুত অনুধাবন প্রয়োজন এবং দেশেবিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশীদের মধ্যকার দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে এই সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

*পরবর্তী অংশ লিখেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ

১১. সামরিক বাহিনীতে নিজস্ব দক্ষ জনবল তৈরির পাশাপাশি যথাযথ গোপনীয়তার সাথে নতুন প্রযুক্তির প্রজেক্ট নিয়ে একাডেমিয়া কলেবরেশন দরকার । পাশাপাশি আইটিতে দক্ষ জনবল নিয়োগে নন-টেকনিক্যাল রিকোয়ারমেন্টে শিথিলতা দরকার। রিসার্চ ইনিস্টিটিউট, যথাযথ ফান্ডিং এবং জবাবদিহিতাও জরুরি ।

১২. সুইডেন (BankId) /সিঙ্গাপুর(SingPass) এর মত ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম থাকা খুবই জরুরি । তাহলে সরকারি, বেসরকারি, ব্যাংকিং সবগুলো সেবা ওয়েবসাইটকে সহজেই সংযুক্ত করা যাবে। প্রায় ৮০% সরকারি, বেসরকারি ওয়েবসাইট বা অ্যাপে মোবাইল নম্বর দিয়ে পাসওয়ার্ড রিকভারি সিস্টেম আছে যা খুবই বিপদজনক । কারণ বর্তমান সরকারের নিয়ম অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিম সক্রিয় না থাকলে তা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বিক্রির জন্য আবার বাজারে ছাড়া হয়। এতে করে তথ্য বেহাত হওয়া খুবই সহজ। কিন্তু ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম থাকলে এটির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে ।

১৩. ডাটা সিকিউরিটির পাশাপাশি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালাও থাকা জরুরি।

১৪. সরকারি অপ্রয়োজনীও ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়া। কয়েকটি তথ্য দেখানোর জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওয়েবসাইট বা অ্যাপের প্রয়োজন নেই। যথাযত প্রয়োজনের ভিত্তিতেই কেবলমাত্র এধরনের প্রজেক্ট করা যেতে পারে।

১৫. সফটওয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদেশি নির্ভরতা ন্যুনতম পর্যায়ে আনা প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে দেশিও সেবা গ্রহণে সচেষ্ট হওয়া বাঞ্চনীয়।

 

Source https://www.kalbela.com/ajkerpatrika/joto-mot-toto-path/111583