বাজেট ২০২৫ – ২৬, ধরাছোঁয়ার বাইরে স্বদেশীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সম্ভাবনা

বণিক বার্তা |
বাজেট ২০২৫-২৬ |
৩রা জুন, ২০২৫ |
সাজ্জাদ জহির |

মোটা দাগে আর্থিক সংখ্যা পরিবেশন কাঠামোর আঙ্গিকে অতীত ধারা থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন পাইনি।

মোটা দাগে আর্থিক সংখ্যা পরিবেশন-কাঠামোর আঙ্গিকে অতীত ধারা থেকে উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন পাইনি। কয়েকটি উদহারণ দিব, যেখানে পরিবর্তন আশা করেছিলাম। (১) মন্ত্রণালয়-ভিত্তিক উন্নয়ন বাজেট-এর ধারণায়। বিশেষত, ব্যক্ত উন্নয়ন -এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবার জন্য উন্নয়ন বাজেটে ভৌত-অবকাঠামো থেকে “অন্য” উন্নয়নকে পৃথক করা প্রয়োজন। (২) অতীত প্রকৃত বাজেট পর্যালোচনা না করে ও তা থেকে শিক্ষা না নিয়ে, সহজসরল ঐকিক নিয়মে প্রস্তাবিত বাজেট-এর আকার বৃদ্ধির প্রবণতা থেকে বেরুনো সম্ভব হয়নি। (৩) কর-বহির্ভূত সরকারী রাজস্ব-এর বর্ণনা আজো অস্পষ্ট এবং আকারে নিদারুণভাবে অপ্রতুল। আমি ভিন্ন পরিসরে, দেশীয় অর্থনীতিক কর্মকান্ড ও জনসাধারণের আয়ের উপর কর আরোপের বাইরে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছি। বিভিন্ন উপদেষ্টাদের বক্তব্যে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান/দপ্তরের আওতাধীন সম্পদের অর্থকর ব্যবহারের অতীত ব্যর্থতা প্রকাশ পেয়েছিল। অথচ এক্ষেত্রে কাংখিত কোনও নতুন চুক্তির আভাস বাজেটে পাওয়া যায় না। কোনও কারণে মন্ত্রণালয়-ভিত্তিক বাজেটে যদি তা ঢাকা থাকে, সেটা প্রকাশ্যে আনা জরুরী। আন্তর্জাতিক সরকারী চুক্তির ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। (৪) বেশকিছু শব্দচয়ন, যেমন, “বিশ্বমানের ঊন্নয়ন”, “যুগপোযোগী” ও “আউটকাম বেইজড” (ফলাফল-ভিত্তিক) শিক্ষা, চিন্তায় অতীতের ধারাবাহিকতা থেকে মুক্তির পথ দেখায় না। শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে, আশা করেছিলাম যে অতীতে, প্রতিষ্ঠান ও জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সৃষ্ট বিকৃতি থেকে বেরুনোর প্রাথমিক পদক্ষেপ বাজেটে পরিলক্ষিত হবে। দুঃখজনকভাবে সেটা নজরে পড়েনি।

বেশ কয়েকটি বিষয়ে নতুন উদ্যোগ লক্ষণীয়। পূর্ণভাবে না দেখতে পারায় কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করবো, যা থাকে কার্যকর সুফল পেতে হলে প্রাক-প্রয়োগ বিশ্লেষণ ও বাস্তবতা অনুধাবন প্রয়োজন।

(১) যুব-কর্ম-সংস্থান – এটা কি গতানুগতিক ধারায় চলবে? অথবা বাইরের বাজারের সাথে অধিক সম্পৃক্ত করে যুব-প্রশিক্ষণ বিস্তৃত করা হবে? না কি, স্টার্ট-আপ এর নামে বাইরে নাগরিকত্ব নেয়া চল্লিশোর্ধ ‘যুবা’দের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার পেছনে বরাদ্দ করা হবে? রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের সাথে সাম্নজস্যপূর্ণ হবার জন্য এসবের বাইরে ভাবনা প্রয়োজন – বিশেষত, স্বদেশপ্রেম ও সততার আদর্শে চালিত তরুণ শিল্প-বাণিজ্য খাতের উদ্যোগী গড়ার বীজ বপনের সুযোগ এই বাজেটে নেয়া হবে বলে আশা করেছিলাম।

(২) মূলধন আয়ের উপর কর আরোপ থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির উল্লেখ রয়েছে। তার বিস্তারিত দেখবার /জানবার অপেক্ষায় রইলাম। তবে, এপ্রসঙ্গে, সম্পত্তি নিবন্ধীকরণের উপর করহ্রাসের প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই। তবে, কমবেশি সকলেই অবগত যে, কেবলমাত্র হ্রাস করলেই দলিলে উল্লেখিত দাম বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। যিনি সম্পত্তি কিনবেন, তার পূর্বেকার ‘কর-না-দেয়া’ সঞ্চয় (তথাকথিত কালোটাকা)-কে একই হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় বৈধ হবার সুযোগ (ব্যবস্থা) না রাখলে, রাজস্ব হ্রাস পাবে। এই শংকা বাস্তবে রূপ নিলে, সম্পত্তি বিক্রয় সহজ হবে, যা বিক্রয়ে আগ্রহী অনেক দ্বৈত-নাগরিকদের হস্তান্তরকে সহজ করবে, এবং কালোটাকার অংশবিশেষ তাঁদের হাতে গেলে, তা আবারো হুন্ডি বাজারকে চাঙ্গা করবে।

আন্তর্জাতিক নিয়মের নামে পশ্চিমা বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে একটি দেশের আর্থিক কর্মকান্ড এবং সরকারী বাজেট প্রণয়ন আজ দুরূহ। কিন্তু ‘বিপ্লব’এর দাবী করলে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মৌলিক পরিবর্তন আনা জরুরী। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে তা অনেকেই আশা করেনা। কিন্তু কোন ধরণের রাজনৈতিক ব্যবস্থায়, ব্যত্যয়ের নামে স্বেচ্ছাচারিতা (বা স্বৈরচারিতা) সৃষ্টি না করে, স্বদেশীয় (এবং সাংবিধানিক লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ) অর্থনীতিক ব্যবস্থাপনা তৈরি সম্ভব, তা আজো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেল!

সাজ্জাদ জহির: নির্বাহী পরিচালক, ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ

Source: https://bonikbarta.com/magazine/budget2025-26/IZfDS8gB0tqYDIGh